প্রভাত সঙ্গীত

Sarkarverse থেকে
imported>T12 কর্তৃক ০২:২৭, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (রেফ)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন

প্রভাত সঙ্গীত হ'লো প্রভাত রঞ্জন সরকার-এর রচিত সংগীত সমূহ। ১৯৮২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর দেওঘরে তিনি প্রভাত সঙ্গীত রচনার সূত্রপাত করেন। তার পর মাত্র আট বছরের মধ্যে তিনি ৫০১৮ টি গান রচনা করেন যা সামগ্রিক ভাবে প্রভাত সঙ্গীত নামে পরিচিত হয়।[১][২]

"প্রভাত সঙ্গীত" নামের অর্থ

'সঙ্গীত' শব্দটির অর্থ 'গান', কিন্তু 'প্রভাত' শব্দটির অর্থ এখানে 'সকাল' নয়, অর্থাৎ প্রভাত সঙ্গীত প্রভাতকালিক সঙ্গীত নয়। প্রভাত রঞ্জন সরকার এর নামের প্রথম অংশ থেকেই এ ক্ষেত্রে প্রভাত সঙ্গীত কথাটির উৎপত্তি হয়েছে।[১]

রচনকাল এবং রচনাবৈশিষ্ট্য

প্রভাত সঙ্গীত-এর প্রথম গান বন্ধু হে, নিয়ে চলো রচিত হয় ১৯৮২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তারিখে বিহারের দেওঘর শহরে। এই গানটির মাধ্যমেই প্রভাত সঙ্গীত-এর সূত্রপাত হয়। এর পরে ৮ বছর ১ মাস ৭ দিনে মোট ৫,০১৮ টি গান রচিত হয়। প্রভাত সঙ্গীত-এর শেষ গানটি রচিত হয় ২০ অক্টোবর ১৯৯০ সালে, প্রভাত রঞ্জন সরকার এর মহাপ্রয়াণের ১ দিন আগে।[১]

অনান্য অধিকাংশ রচনার মতো প্রভাত সঙ্গীত-ও প্রভাত রঞ্জন সরকার নিজের হাতে লেখেননি। প্রভাত রঞ্জন গড়গড় করে গানের কথা এবং গানের সুর সংক্রান্ত তথ্য বলে যেতেন, এবং তাঁর ভক্ত-অনুরাগীরা সেই তথ্য লিপিবদ্ধ করতেন। গানের কথা লেখার কাজ শেষ হয়ে গেলে তিনি মুখে মুখে গায়কীটাও শিখিয়ে দিতেন। এই সময়ে তিনি হারমোনিয়াম, তবলা বা তানপুরা জাতীয় বাদ্য যন্ত্র-এ ব্যবহার করতেন না।[১]

ভাবগত বৈশিষ্ট্য

প্রভাত সঙ্গীতের বহু গানে কিছু ভাবগত বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। প্রভাত সঙ্গীতের তাত্ত্বিক-রা এই ভাবগত বৈশিষ্ট্যের নিরিখে প্রভাত সঙ্গীতের গানগুলিকে বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন, যেমন—

আশাবাদ

প্রভাত সঙ্গীতের বহু গানে অনুরণিত হয়েছে আশাবাদের সুর। এই সকল গানের কোন ঝানেই খুঁজে পাওয়া যায় না ক্লেদ বা ক্লান্তির লেশমাত্র চিহ্ন। প্রভাত সঙ্গীতের কিছু আশাবাদী গানের উদাহরণ হলো—

  1. গান ০০০৯: আঁধারের সেই হতাশা কেটে' গেছে আজ"
  2. গান ০০১৮: কে যেন আসিয়া কয়ে গেছে কাণে নোতুন প্রভাত আসিবে
  3. গান ০১৩২: নিরাশার গান গাইবো না আর
  4. গান ১৮০৮: এক তুমি মোর ভরসা, নিরাশ প্রাণে রঙীন আশা ইত্যাদি

নব্যমানবতাবাদ

প্রভাত রঞ্জন "প্রাঊট" এবং "নব্যমানবতাবাদ"-এর প্রবক্তাও বটে। তাঁর বিভিন্ন গানে তাঁরই প্রবর্ত্তিত নব্যমানবতাবাদ-এর সুর পরিলক্ষিত হয়। নব্যমানবতাবাদ-এর ছন্দে আবদ্ধ কয়েকটি গানের উদাহরণ—

  1. গান ০০৫৭: ছন্দ আমার সবাইকে নাচাতে
  2. গান ১০৯০: মানুষ সবাই আপন
  3. গান ২১৯২: মানুষ যেন মানুষের তরে সব কিছু করে যায়

সমাজচেতনা

বর্তমান সমাজ শোষিত, অবহেলিত, নিপীড়িত মানুষে পরিপূর্ণ। শোষণ, বঞ্চনা, হাহাকার, অশ্রু আজ বহু মানুষের নিত্য সঙ্গী। মানুষ সামাজিক প্রানী হলেও বহু ক্ষেত্রে ও বহু সময়ে তার সামাজিক চেতনা খুবই দুর্বল। প্রভাত সঙ্গীত-এর অনেক গানে প্রভাত রঞ্জন সরকারের সমাজচেতনা ফুটে' ওঠে। যেমন—

  1. গান ০০৪৯: মানুস পেয়েছে নানা ক্লেশ-ব্যাধি-তাপ
  2. গান ০০৭৪: চল চল চল চল গান গেয়ে চল
  3. গান ০১৩০: সোণালী ভোর জীবনে মোর আবার কি রে আসছে ফিরে' ইত্যাদি

মিষ্টিসিজ্‌ম্‌ বা রহস্যবাদ

জীব-শিব এবং সসীম-অসীমের বিচিত্র খেলায় ভরা এই বিশ্ব। এ'খানে লীলাময়ের লীলায় মাতোয়ারা সসীমের স্বভাব হ'লো অসীমে হারিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা। অপর দিকে পরমপুরুষও সদাদর্বত্র মানবমনে তথা বিশ্বপ্রকৃতিতে এঁকে চলেছেন তঁআর চিত্র। জীব-শিব এবং সসীম-অসীমের এই রহস্যবাদ পরিস্ফুট যোগীর অন্তর্দৃষ্টিতে। প্রভাত সঙ্গীতে এই মিষ্টিসিজ্‌ম্‌ বা রহস্যবাদ জাতীয় গানের ছয়লাপ দেখা যায়। যেমন—

  1. গান ০০৪৯: স্বপনে আমি জ্যোৎস্নারাতে
  2. গান ০০৭৬: বল গো তোরা স্বপন শেষে
  3. গান ০০৮০: জেনে বা না জেনে ভালোবাসি একই জনে ইত্যাদি

অনষ্ঠানমূলক

সমাজের বিভিন্ন বিভিন্ন অনুষ্ঠান-কে কেন্দ্র করে-ও প্রভাত রঞ্জন সরকার বভিন্ন গান রচনা করেছেন। যেমন

  1. গান ০০৫৯: (নবজাতকের নামকরণের জন্য) — ননীর পুতুল টুটুল টুটুল
  2. গান ০১৩৫: (জন্মদিনের অনুষ্ঠানে)— জন্মদিনে এই শুভ ক্ষণে
  3. গান ০১৩৬: (বৃক্ষারোপণের অনুষ্ঠানে)— আজকের এই শিশু তরু ইত্যাদি

প্রকৃতিপর্ব

প্রভাত সংগীতে প্রচুর সংখ্যক প্রকৃতি পর্বের গান রয়েছে। প্রয়ার রঞ্জন সরকার ষড়ঋতুর রূপবৈচিত্র্য ফুটিয়ে তুলেছে তাঁর গানে। আবার প্রতিটি ঋতুর কালিক বৈচিত্র্য-ও তাঁর গানে লক্ষ্য করার মত। যেমন—

নীচের গানগুলি ঋতুভিত্তিক ভাবে সাজানো
  1. গান ০১১৯: মেঘ তুমি কাছে এসো, জল চাই আরো জল চাই (গ্রীষ্ম)
  2. গান ০১১৬: বরষা এসেছে নীপনিকুঞ্জে (বর্ষা)
  3. গান ৫০১১: মেঘ, মেঘ আকাশ মেঘে ঢাকা (বর্ষা)
  4. গান ০১০৩: বসন্ত আজ জাগলো আম্রমুকুল-বকুল-শিমুল-পারুল-পলাশে ইত্যাদি

শিব ও কৃষ্ণ

শিব এবং কৃষ্ণ — এই দুই হিন্দু দেবতার উপস্থিতি প্রভাত রঞ্জন সরকার-এর সকল রচনার মতো প্রভাত সংগীতেও পরিলক্ষিত হয়। প্রভাত রঞ্জন সরকার এই দুই দেবতাকে নিবেদন করেছেন শতাধিক গান, কয়েকটি গানের উদাহরণ—

শিব
  1. গান ১৫৬৫: বজ্র কঠোর কুসুম কোরক (সংস্কৃত)
  2. গান ২৫২৬: জয় শুভ বজ্র ধরা শুভ্র কলেবর (সংস্কৃত)
কৃষ্ণ
  1. গান ০২২০: কৃষ্ণ মুরারি বাশুরি তোমারি (বাংলা)
  2. গান ০২২৬: সকালের আ%খি ছলছল (বাংলা)

শিশুজগৎ

শিশুদের একটা নিজস্ব জগৎ আছে যা বড়দের জগৎ থেকে বহুলাংশে পৃথক। স্বাভাবিক ভাবেই শিশুদের সাহিত্যতেও এই পৃথকতা লক্ষ্য করা যায় যেখানে থাকে রাজপুত্ত্র, রাজকন্যা, দৈত্য-দানব, বেঙ্গমা-বেঙ্গমী-র মতো চরিত্র। প্রভাত রঞ্জন সরকার তাঁর রচনাতে শিশুমনের জন্য সাহিত্যকে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রভাত সঙ্গীতেও প্রচুর সংখ্যক শিশুসঙ্গীত রয়েছে। যথা—

  1. গান ৩৬১: রাতের বেলায় সবাই ঘুমায় শিউলি কেন জাগে
  2. গান ৩৯৫: নীলসায়রে সোণার কমল
  3. গান ৪৩২: রূপকথার এক রাজা ছিলো ইত্যাদি

অধ্যাত্মচেতনা

প্রকাশনা

প্রভাত সঙ্গীত এর প্রথম খণ্ডের প্রচ্ছদ পট।

১৯৯০ সালের মধ্যেই প্রভাত রঞ্জন সরকার-এর ৫০১৮ টি গান-কে সংকলিত করে ২০০ খণ্ড প্রভাত সঙ্গীত প্রকাশিত হয়। সে সময়ে আনন্দ মার্গ কর্তৃপক্ষের মনে হতে থাকে যে কোনো সংগীতানুরাগী-র পক্ষে-এ বড়ো কঠিন ব্যাপার। তাই পরবর্ত্তীকালে প্রভাত সঙ্গীত বিভিন্ন খণ্ড সংখ্যায় প্রকাশিত হয়, যেমন—

  • ২০০ খণ্ড (প্রতি খণ্ডে ২৫ টি গান)
  • ২৫ খণ্ড (প্রতি খণ্ডে ২০০ টি গান)
  • ১০ খণ্ড (প্রতি খণ্ডে ৫০০ টি গান)

প্রভাত সঙ্গীত-এর সঙ্গীত তালিকা

তথ্যসূত্র

  1. ১.০ ১.১ ১.২ ১.৩ Sarkar, Prabhat Ranjan (1993)। Acarya Vijayananda Avadhuta, সম্পাদক। Prabhat Samgiita Volume 1। Kolkata: Ananda Marga Publications। আইএসবিএন 81-7252-041-7 
  2. Sarkar, Prabhat Ranjan (1994)। Acarya Vijayananda Avadhuta, সম্পাদক। Prabhat Samgiita Volume 1 (Bengali ভাষায়)। Kolkata: Ananda Marga Publications। আইএসবিএন 81-7252-082-4